
চলমান লকডাউন ও মাহে রমজান মাসে সচারচর তেমন বাসার বাইরে যাওয়া হয়না। তারপরে কদিন থেকে অসুস্থতার কারণেও রুমে ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ্ এখন সুস্থ। এইদিকে আবার আমাদের কোম্পানির একটা পার্সেল কুরিয়ার এসে জমা হয়ে আছে। মুন্সিগঞ্জ শাখার সুন্দরবন কুরিয়ার অফিস থেকে বারবার ফোন দিচ্ছে ভাইজান আপনার নামে পার্সেল আসছে কবে নিবেন তাই আজ সকাল সকাল মানে কষ্ট হলেও সকাল দশটায় উঠে হেয়ার কন্ডিশনার ও সন্তুর সাবান ইউজ করে গোসলটা জলদি সাড়লাম। কেনো যেনো মনটা খুব ফুরফুরা ছিলো তাই প্যান্টের সাথে কালা পাঞ্জাবিটাও পড়লাম, সাথে ছিলো লাল চশমা, মুখে মাস্ক ও পায়ে গিফটের জুতো ।।
যাইহোক ফুরফুরা মনে মানিব্যাগ পিছনের পকেটে আর দুইটা মোবাইল দুই পাঞ্জাবির পকেটে লইয়্যা বের হলাম মুন্সিগঞ্জ সুপার মার্কেটের উদ্দেশ্যে আর হ্যাঁ সাথে কিন্তু আমার প্রেস প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ডও ছিলো ।।
এতক্ষণ যা বললাম সবই ট্রায়াল ছিলো কাহিনী শুরু এখান থেকে,,, রুম থেকে বের হওয়া মাত্রই বুঝলাম প্রচন্ড রোদ প্রায় 40° ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা শীতল হাওয়ার কোনো অস্তিত্ব নেই। দ্রুত এক রিক্সাওয়ালা মামা রে লইয়্যা রওয়ানা শুরু করলাম । ভাবলাম করোনায় তেমন কেউ হয়তো বের হয়না রাস্তা ফাকাঁ থাকবে উড়ে উড়ে যাব, একি কী দেখি একি কান্ড!! রিকাবি বাজার পার হয়ে পুরো রাস্তা জ্যাম একদিকে রাস্তার চলছে অন্যদিকে আবার ট্রাক আনলোড হচ্ছে শুনলাম রাস্তা ফাকাঁ হতে প্রায় দুই ঘন্টা লাগবে এই গরমে শরীর পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে মাথায় আগুন!!$ রিক্সাওয়ালা মামা কইলো চিন্তা কইরেন না মামা, আমি আছি তো। হেতি পিছনে টান দিয়ে কিছুদূরে নিয়ে গিয়ে অন্য একটি লোকাল রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তবে রাস্তাটা আমার কাছে নতুন আবার ভাঙাচুরা। আসলে মিরকাদিম পৌরসভা শিল্প এলাকা হলেও ইদানিং নেতারা একে অপরের সাথে নিজে নিজেই সবসময় মারামারি ও প্রতিহিংসায় নিয়োজিত থাকায় রাস্তাঘাট গুলোর অনেকটাই বেহাল দশা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে রিকাবি বাজার টু মুক্তারপুর সহ বেশ কয়েকটি রাস্তা যাইহোক কিছুদূর গিয়ে দেখলাম বিনোদপুরের ভিতর দিয়ে যাইতেছি এটা পৌর এলাকা হলেও পাকা রাস্তা ভেঙে যাওয়ার কারণে উচু নিচুর সৃষ্টি হয়েছে যা অটো রিক্সায় বসে হারে হারে টের পাচ্ছি। অসহ্য রোদ গরমের মাঝে রাস্তাটাও এক বিষফোঁড়া।
গরমের তাপাদহে বিগলিত শহর করোনার প্রভাবে যেনো আরো নিস্তেজ হয়ে গেছে। তবে মানুষের মাঝে নেই তেমন কোনো স্বাস্থ্য সচেতনতা। আজ থেকে দোকানপাট খুলা তাই সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ কর্মকান্ড নিয়ে এত কিছু নিয়ে যখন ভাবছি আর ভাবছি ঠিক তখনি রিক্সার সামনেই এক অদম্য, ডর ভয়হীন, মায়াবী, শতরুপে সজ্জিত, রুপ জগতের রাজকন্যা, অপরুপা সুন্দরী এক রমণী কালো ড্রেসে দাঁড়িয়ে ঠিক তখনি অদৃশ্য কারণে কেনো যেনো প্রকৃতি ফিরে পেলো স্বস্তি,সজীবতা। চারদিকে প্রচন্ড রোদের মাঝেও যেনো নেমে এলো শান্তির ছায়া।
হঠাৎ পুলকিত হলো মন,জাগ্রত হলো মানবতা। একটু একটু করে রিক্সা এগিয়ে যায় আর যেদিকে দেখি সেদিকেই শুধু গাছ ভর্তি অপরুপ মনোরম কৃষ্ণচূড়ার ফুটন্ত ফুল দেখতে পাই, সেই কাজল বরণ চোখের কী অপরুপ চোখের চাহনি, ওড়নাটা টেনে মিষ্টি হাঁসির ঝলক যেনো হৃদয়ের উপর দিয়ে স্টিমরোলার চালিয়ে দিলো ।।
এটা কী ছিলো? কী হলো সবকিছুই যেনো মূহূর্তে গুলিয়ে ফেলেছি। শুধু মনে মনে ভাবছি এই কারণেই কী তাহলে এই এলাকার নাম বিনোদনপুর সরি বিনোদপুর ।।
কিছু কথাঃ
রম্য মিশ্রিত বাস্তব ছোট গল্প *প্রচন্ড তাপাদহে অপরূপার শান্তির ছায়া*
লেখকঃ সোহাগ আলী (মিডিয়া ও মানবাধিকার কর্মী)