কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ম, নিরসনে করণীয়-মন্জু

মোঃ মন্জু

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে মারাত্মক যে অপরাধ চক্রটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তা হলো কিশোর গ্যাং! প্রায় প্রতিটি শহর, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ম বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।

#কারা কিশোর গ্যাং এর সাথে সক্রিয়?

সাধারণত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক লেভেলে পড়ুয়া ছাত্ররা অপরাধ চক্র কিশোর গ্যাং এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নামে মাত্র ছাত্র সেজে এরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজে ত্রাস সৃষ্টি করে থাকে। মূলতঃ রাজনৈতিক নেতাদের রেফারেন্স দিয়ে কিশোর গ্যাং এর সাথে জড়িতরা বুক ফুলিয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করে বেড়ায়।

#কিশোর গ্যাং সম্পর্কে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের দায় কতটুকু?

কিশোর গ্যাং অপরাধ চক্রের লিডাররা সাধারণ স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যাক্ষ মদদে নির্বিঘ্নে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করে থাকে। নারীদের উত্যক্ত করা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে বাধাপ্রদান ও মাদকসেবনসহ নানাবিধ অসামাজিক কার্যকলাপ এদের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

#আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি কিশোর গ্যাং দমনে সক্ষম?

সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূলতঃ স্বাধীন একটি দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে দেশের যেকোনো এলাকায় প্রতিষ্ঠিত কিশোর গ্যাং চক্রকে আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেড়েওঠা কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহন করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে জাতীয় সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মতে এসব কিশোর গ্যাংদের আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করার ব্যাপারে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন।

#অপরাধ জগৎ থেকে সন্তানকে দূরে রাখতে কিশোর গ্যাংদের অভিভাবকগণের ভূমিকা কতোটা জোরালো?

প্রায় দেখা গিয়েছে যে, বর্তমান যুগে উঠতি বয়সী ছেলেরা তাদের অভিভাবকদেরকে তেমন একটা মূল্যায়ন করে না৷ আবার বেশিরভাগ অভিভাবক নিজের সন্তানদের এমন অধপতনের দিকটি তেমন গুরুত্ব দেন না। ফলে কিশোর গ্যাং অপরাধের সাথে জড়িত ছেলেরা অনেকবেশি ডেসপারেট হয়ে পড়ে! তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক এসব বিগড়ে যাওয়া কিশোর গ্যাংদেরকে আটক করা হলে অভিভাবকরা উল্টো সন্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়। তাই হাতেগোনা ২/৪ জন ব্যতীত বেশিরভাগ অভিভাবকই তাদের সন্তানদেরকে অপরাধ জগৎ থেকে দূরে রাখতে জোরালো ভূমিকা রাখেন না।

#কিশোর গ্যাংদের নির্মূলে কার্যকরী কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে?

কিশোর গ্যাং বর্তমানে এক হিংস্র ত্রাসের নাম। এই অপরাধী চক্রকে নির্মূল করা না হলে সামাজিক প্রেক্ষাপট হুমকির মুখে পড়বে। তাছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ইতিবাচক লক্ষ্য অন্ধকারে নিমজ্জিত প্রায়! দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব বিস্তারে স্কুল-কলেজের ছাত্রদেরকে ব্যবহার বন্ধ করলে ৭০% কিশোর গ্যাং অপরাধ বিলীন হতে পারে। অপরদিকে অভিভাবকদেরকে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সদিচ্ছা মাথায় রেখে কঠোর অনুশাসন প্রয়োগ করলে শতভাগ কিশোর অপরাধ দমন করা সম্ভব হবে বলে মনে করি। ধন্যবাদ।

মোঃ মন্জু

( বিশিষ্ট কলামিস্ট )