২০ বছরের মধ্যে রেকর্ড ভঙ্গলো দর্শনা কেরুজ চিনিকল  ৩০ কোটি ২৯ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন

আলমগীর হোসেন,চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধিঃ

দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ২০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে মুনাফা অর্জন করেছে ৩০ কোটি ২৯ লাখ টাকা।লোকশানের কারণে দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ৬টি চিনিকল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরুজ চিনিকলটি ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১০৪ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করলেও চিনি উৎপাদন বিভাগে ৭৬ কোটি টাকা লোকশান করেছে।

সেই সাথে সরকারকে ৭৩ কোটি টাকা রাজস্ব দেবার পাশাপাশি ৩০ কোটি ২৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা নীট মুনাফা অর্জন করেছে। আগামীতে চিনিকলটিকে আরও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ।

চুয়াডাঙ্গার জেলার একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরুজ চিনিকল। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এচিনিকলের বয়স আজ ৮৩ বছর। বয়সের ভারে জরাজির্ণ হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ১শ ৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে আধুনিকায়নের কাজ শুরু হলে তা চলছে কচ্ছপ গতিতে।

এপ্রিষ্ঠানকে ঘিরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত আছে প্রায় ১২ হাজার লোক। দেশ বিভাগের পর ১৯৭২ সালে তৎকালিন সরকার চিনিকলটিকে জাতীয় করণ করে। সেই থেকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশেনর আওতায় পরিচালিত হয়ে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হয়ে আসতে অনেকেই আগ্রহী হয়ে থাকেন। এখানে শুধু চিনি উৎপাদ নই হয় না চিনির পাশাপাশি এ্যালকোহল, স্প্রিট, জৈবসার উৎপাদন হয়ে থাকে। তারি ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৯৪ কার্যদিবসে ১ লাখ ১১ হাজার ৮৬২ মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করেছে ৫ হাজার মেট্রিকটন। যেখানে বন্ধ হওয়া কুষ্টিয়া জগতি চিনিকলের ১৪ হাজার মেট্রিকটন আখ রয়েছে। ফলে চিনিউৎপাদন বিভাগ ও কৃষিখামারসহ মোট লোকশান হয়েছে ৭৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে লোকশানের পরিমান ছিলো ৭৩ কোটি ২৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। পাশাপাশি ডিস্টিলারী, হ্যান্ড সেনিটাইজার ও বায়োফার্টিলাইজার বিভাগ থেকে মুনাফা অর্জন করেছে ১০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ৭৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। ফলে প্রতিষ্ঠানটি নীট মুনাফা অর্জন করেছে ৩০ কোটি ২৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।

সরকার ২৫ কোটি টাকা মুনাফা অর্জনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে দিলেও তা টপকে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মুনাফা অর্জনের পরিমান ছিলো ১৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। চিনি উৎপাদন বিভাগে লোকশানের কারণ হিসাবে মানহীন আখের জাতকেই দায়ি করেছেন আখ চাষিরা। সেই সাথে আখ চাষ দীর্ঘমেয়াদি চাষ হওয়ায় অনেকেই আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এক বছরে জমিতে ৩ থেকে ৪টি সবজিসহ বিভিন্ন চাষাবাদ করার দিকে ঝুকে পড়েছে চাষিরা। বেশি কিছু চাষি জানিয়েছে, শুধু আখের কারণে না, সীমাহীন অনিয়ম দূনর্ীতির কারণেও লোকশানের পাল্লা ভারি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির।

চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবু সাঈদ বলেন, জেলার অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কেরুজ চিনিকলটি। তাই এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে এ প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার জন্য চিনিকলের অন্যতম কাঁচামাল আখচাষ বাড়ানো খুবই জরুরী। সেই সাথে দায়িত্বরতদের নিষ্টা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠানটি ফিরে পাবে তার সোনালী অতীত।