
রশিদুল ইসলাম রিপন,লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীগামী মহাসড়কের পাশে গত ২ ডিসেম্বর ২০২০ ইং তারিখ সকালে আলাউদ্দিন নগর মমিনপুর এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা উদ্ধারকৃত সেই তরুণীর পরিচয় মিলেছে। প্রেম ঘটিত কারনে পূর্ব পরিকল্পনায় ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলা থেকে সুকৌশলে ডেকে এনে অষ্টাদশী সেই তরুণীকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
হত্যার মোটিভ ও পুরো কাহিনী উদ্ধারসহ প্রায় ৫ মাস পর ধর্ষক ট্রাক চালক চাচা ও আপন ভাতিজাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে চাচা আছেন লালমনিরহাট জেল হাজতে এবং ভাতিজাকে পাঠানো হয়েছে যশোহর শিশু শোধনাগারে। হত্যার কাজে ব্যবহারকৃত ট্রাকটিও জব্দ করে ত্রিশাল থেকে লালমনিরহাটে আনার কথা জানান পুলিশ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ময়মিনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার জনৈক ট্রাক চালকের প্রেমে পড়েন একই এলাকার অষ্টাদশী এক তরুণী। নিজ এলাকায় সেই তরুণীর নাম হামিদা আক্তার। নাম বদলে কলগার্ল হিসেবে তার আলাদা পরিচিতি আছে। কোথাও সুরমা আবার কোথাও নন্দিনী নামে পরিচিত। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাক চালক হয়ে যান দিশেহারা। আগের দুই স্ত্রী ও একাধিক সন্তান থাকায় নারী লোভী ট্রাক চালক সুন্দরী হামিদাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। তবুও তরুণীর চাপ বিয়ে করতেই হবে। বিয়ের চাপ সামলাতে না পেরে প্রেমিকা হামিদাকে অন্য কোথাও নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন চরিত্রহীন প্রেমিক সেই ট্রাক চালক।
গত বছর পহেলা ডিসেম্বর ত্রিশাল থেকে রংপুরে আসতে বলা হয় সেই অষ্টাদশী তরুণীকে। ট্রাক চালক ও তার ভাতিজা (১৫) ট্রাক ভাড়ার উসিলায় আগেরদিন আসেন রংপুরে। তার আগে কুটকৌশল অনুযায়ী ১৫ দিন আগ থেকে তরুণীকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করেন প্রেমিক ট্রাক চালক। অন্য একজনের ফোন দিয়ে তরুণীর সাথে যোগাযোগ চলতো নিয়মিত। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়ের কথা বলে রংপুরে আসতে বলা হয় তরুণীকে। ওইদিন বিকেলে রংপুরের দেয়া ঠিকানায় চলে আসেন সেই তরুণী । এরপর খাওয়া দাওয়া করে ট্রাকে উঠে বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন ট্রাক চালক, ট্রাক চালকের ভাতিজা ও অষ্টাদশী তরুণী হামিদা। পথিমধ্যে বড়খাতা বাউরা বাজারের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরির পর চাচা-ভাতিজা কোন একসময় গণধর্ষণ করেন তরুণীকে। ফাঁদে ফেলে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হবে তা বিশ্বাস ছিল না তরুণীর। তর্কবিতর্ক বাক-বিতন্ডা করার এক পর্যায়ে ট্রাকে থাকা রড দিয়ে তরুণীর মাথায় সজোরে আঘাত করেন ট্রাক চালক। ট্রাকের উপরে তরুণীর মৃত্যু নিশ্চিত হলে পরে বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে লাশ ফেলে পালিয়ে যান ধর্ষক ও হত্যাকারী আপন চাচা-ভাতিজা। পাটগ্রাম থানার জোংড়া ইউনিয়নের মমিনপুর আলাউদ্দিননগর নির্জন এলাকায় মহাসড়কের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এক তরুণীর লাশ দেখে ২ ডিসেম্বর সকালে পুলিশকে খবর দেন জনগণ। উদ্ধারকৃত রক্তাক্ত বিবস্ত্র লাশের পোস্ট মর্টেম শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করেন আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। সেই দিন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন পুলিশ। ২ ডিসেম্বর দায়েরকৃত সেই ক্লু লেস মামলার মোটিভ উদ্ধারে প্রযুক্তি ব্যবহারের পর ক্লু খুঁজে পায় পুলিশ। প্রথমে বাউরা জমগ্রাম থেকে একজন লোক জানান, এক মেয়ে ও দু’জন পুরুষ লোককে বাউরা বাজারে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
এরপর আদিতমারী থেকে আরও একজনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনদিন আগে গত ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পাটগ্রাম থানা পুলিশ বিশেষ টীম বিবস্ত্র সেই তরুণীর করুণ মৃত্যুর কাহিনী জানতে সক্ষম হন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা একান্ত কথোপকথনে জানান।
তিনি আরও বলেন, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর সময় তরুণীর গায়ে জামা, কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত বিবস্ত্র ও পায়ের নীচে পায়জামা ওড়না পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাথায় আঘাতের কারণে মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ায় তরুণীর মুখমণ্ডল রক্তমাখা ছিল। এছাড়া তরুণীর শরীরে অন্য কোথাও আঘাত ছিল না। তবে ধর্ষণের আলামত হিসেবে তরুনীর পার্সোনাল পার্টসে দুইজনের সিম পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মহন্ত বলেন, এ বিষয়ে পুরো কাহিনী সাংবাদিকদের জানানো হবে মর্মে কথা জানান।